এপ্রিল ২৭, ২০২২
এপ্রিল ২৬, ২০২২
ইতিকাফের গুরুত্ব এবং ফজিলত।
ইতিকাফ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো কোন বস্তুকে অপরিহার্যরূপে ধরে রাখা, কোন জিনিসের উপর নিজেকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখা, শুধু অবস্থান করা। আর ইতিকাফ শব্দের মূল ভাবধারা হলো কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য বিন্দুতে মন-মগজ দৃঢ়ভাবে নিবদ্ধ রেখে অবস্থান করা এমন ভাবে যে সেই দিক হতে দৃষ্টি যেন অন্য দিকে ফিরে না যায়।
আর শরীয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয় কোন বিশেষ ব্যক্তির কোন মসজিদে অবস্থান করা। যিনি অবস্থান গ্রহণ করেন, তাকে মুতাকিফ বা আকিফ বলা হয়। বস্তুত, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান গ্রহণ করা ও থাকাকে ইতিকাফ নামে অবিহিত করা হয়।
তিন ধরনের ইতিকাফ রয়েছে- ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল। মান্নতের কারণে ইতিকাফ ওয়াজিব হয়। সেটির পরিমাণ কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা হতে হয় এবং ইতিকাফের মান্নতের সঙ্গে রোজা রাখাও ওয়াজিব। তাই যে কয়দিন ইতিকাফের মান্নত করবে, সে কয়দিন রোজার সঙ্গেই ইতিকাফ করতে হবে। সুন্নত ইতিকাফ হয় রমজানের শেষ দশকে।
রমজানের শেষ ১০ দিন পার্থিব সব কাজকর্ম থেকে মুক্ত থেকে মসজিদে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করা এই উম্মতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। এটা দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমাতে ও আখেরাতের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে অত্যন্ত সহায়ক।
ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিনের ইতিকাফ করল, আল্লাহ পাক তার ও দোজখের মধ্যখানে এমন তিনটি পরিখা তৈরি করে দেবেন, যার একটি থেকে অপরটির দূরত্ব হবে পূর্ব ও পশ্চিমেরও বেশি।’ (তিরমিজি ও বায়হাকি)
যে ব্যক্তি ইবাদত মনে করে সওয়াবের নিয়তে ইতিকাফ করে, তার সব সগিরা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘ইতিকাফকারী ব্যক্তি যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থাকে আর ইতিকাফে লিপ্ত থাকার জন্য কোনো ব্যক্তি বাইরের কোনো নেক কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকলেও ওই নেক কাজসমূহের পূর্ণ নেকি সে লাভ করবে।’ (ইবনে মাজা)
অন্যত্র ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘ইতিকাফকারী মূলত গুনাহ থেকে দূরে থাকে এবং তাকে ইতিকাফের বিনিময়ে এত বেশি নেকি দেওয়া হবে যেন সে সব নেকি অর্জনকারী।’ (ইবনে মাজা)
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগীর কাজে এতই কষ্ট স্বীকার করতেন যা অন্য সময় করতেন না। (তিরমিজী)
এপ্রিল ২৪, ২০২২
ইসলামে যাকাতের নিয়মাবলী।
যে সকল সম্পদে যাকাত ফরজ এবং এই সম্পদের যাকাত দিতে হবে:
(১) স্বর্ণ= সর্বনিম্ন ৮৫ গ্রাম, (৭.৫০ ভরি বা ৭.৫০ তােলা। (২) রৌপ্য= সর্বনিম্ন ৫৯৫ গ্রাম, (৫২.৫০ ভরি বা ৫২.৫০ তােলা)। (৩) নগদ অর্থ, ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য অথবা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের যে দাম হয় সে পরিমান নগদ ক্যাশ থাকলে তাতে যাকাত দিতে হবে, তা নিজের কাছে জমা থাকুক অথবা ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকুক। সুতরাং এ পরিমান টাকা কারাে কাছে এক বছর জমা থাকলে তাতে যাকাত দেয়া ফরজ। (৪) ব্যবসায়িক পণ্য। (৫) জমিন থেকে উৎপাদিত রবিশষ্য (যেগুলাে শুকিয়ে সংরক্ষণযােগ্য) যেমন, ধান, গম, সরিষা, ভুট্টা ইত্যাদি অথবা ফলফলাদি (যেগুলাে শুকিয়ে সংরক্ষণযােগ্য) যেমন খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি। (৬) গবাদী পশু (নির্দিষ্ট পরিমান সাপেক্ষে)।
যে সকল জিনিসে যাকাত নেই এবং এই সম্পদের যাকাত দিতে হবেনা:
(১) বসবাসের জন্য বসত ভিটা। (২) ঘর-বাড়ি। (৩) ফসলের জায়গা-জমি। (৪) বাড়ির ব্যবহারিক আসবাবপত্র। (৫) ব্যবহারের জন্য গাড়ি। (৬) ভাড়ার জন্য বাস, ট্রাক, লঞ্চ ইত্যাদি পরিবহন। (৭) ভাড়ার জন্য তৈরিকৃত আবাসিক বিল্ডিং বা দোকান। (৮) নিজস্ব দোকান।
(৯) দোকানের জায়গা ও ফার্নিচার (তবে দোকানের পণ্যের যাকাত দিতে হবে) ইত্যাদি এগুলােতে যাকাত নেই।
(১০) পুকুরের মাছেও যাকাত নেই। তবে মাছ বিক্রয়ের অর্থ যদি নিসাব পরিমান হয় তাহলে তাতে যাকাত দিতে হবে।
(১১) কাঁচামাল-যেমন, শাক-সবজি, আম, কাঠাল, লিচু ইত্যাদি ফলমূলে যাকাত নেই।
তবে এগুলাে বিক্রয়ের অর্থ নিসাব পরিমান হলে তাতে যাকাত দিতে হবে। অনুরূপভাবে দোকান, আবাসিক বিল্ডিং, বাস-ট্রাক ইত্যাদিতে যাকাত নাই। কিন্তু এগুলাে থেকে প্রাপ্ত ভাড়া নিজের অন্যান্য অর্থের সাথে যুক্ত করে নিসাব পরিমান হলে যাকাত বের করতে হবে।
জায়গা-জমি, গবাদী পশু ও বিল্ডিং ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করলে সেগুলাে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে যাকাত দিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুক এবং সেই সাথে নিসাব পরিমাণ সম্পদশালীদের ফরজ বিধান যাকাত দেয়ার তাওফিক দান করুক।
(আমিন)
এপ্রিল ১৯, ২০২২
বিশ্বনবীর হাতে লাগানো আজওয়া খেজুরের উপকারিতা এবং এর ইতিহাস।
আজওয়া খেজুর আকারে বেশ ছোট, কালো রঙের আস্তরণে আবৃত দেখতে প্রায় কালো জামের মতো। তবে অত্যান্ত সুস্বাদু পুষ্টিকর ও মানসম্মত। আমাদের প্রানের প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সর্বপ্রথম নিজ হাতে আজওয়া খেজুর বীজ রোপণ করেছিলেন।
তবে এই খেজুরের জন্মের পিছনে রয়েছে বিশেষ এক কারন। হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) ছিলেন একজন কৃতদাস, একদিন তিনি তার দাসত্ব থেকে মুক্তি চাইলেন তার মালিকের কাছে। তার মালিক ছিলেন একজন ইহুদি। তখন তার সেই মালিক তাকে শর্ত দেয় নির্দিষ্ট কয়েকদিনের মধ্যে তাকে ৪০ আউন্স স্বর্ণ দিতে হবে সেই সাথে ৩০০টি খেজুর গাছ রোপণ করে সেখানে খেজুর ফলাতে হবে। যদি এই শর্ত তিনি মেনে নেন তবেই দাসত্ব থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু এত কম সময়ে এত অর্থ জোগান করা আর খেজুর ফলানো প্রায় অসম্ভব ছিল।
এরপর সালমান ফারসী (রাঃ) মহানবীর দরবারে এসে ঘটনার বর্ননা করলেন। তারপর হযরত আলী (রাঃ) কে সাথে নিয়ে মহানবী (সাঃ) গেলেন ঐ ইহুদির কাছে। ইহুদি এক কাঁদি খেজুর দিয়ে বললেন এই খেজুর থেকে চারা উৎপন্ন করে ফল ফলাতে হবে। মহানবী দেখলেন ইহুদির দেওয়া সেই খেজুর গুলো আগুনে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেলেছে যাতে চারা না গজায়। তিনি আলী (রাঃ) কে গর্ত করতে বললেন আর সালমান ফারসী (রাঃ) কে বললেন পানি আনতে। আলী (রাঃ) গর্ত করলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজ হাতে প্রতিটি গর্তে সেই পোড়া খেজুরের বীজ রোপণ করলেন। পরে তিনি সালমান ফারসী (রাঃ) কে সেই গর্তে পানি দিতে বলেন। আর একই সাথে নির্দেশ দেন বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যেন তিনি পিছে ফিরে না তাকান।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কথা মতো সালমান ফারসী (রাঃ) তালা বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর পিছনে ফিরে তাকালেন। তাকিয়ে তিনি দেখলেন যে প্রতিটি গাছ খেজুরে পরিপূর্ণ। আর খেজুর গুলো পেকে কালো রঙের হয়ে গিয়েছে।
এছাড়া সহি আল বুখারীতে উল্লেখ রয়েছে সালমান ফারসী (রাঃ) বলেছেন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি ভোরে ৭টি আজওয়া খেজুর খাবে সেদিন কোন বিষ ও যাদু টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।
এদিকে বিজ্ঞানের তথ্য মতে আজওয়া খেজুরে আছে আমিষ, শর্করা, প্রয়োজনীয় খাদ্য আঁশ ও স্বাস্থ্য সম্মত ফ্যাট। এছাড়া ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি দ্বারা ভরপুর। ভিটামিন-এ এর গুরুত্ব উপাদান ক্যারোটিনও রয়েছে এতে।
এপ্রিল ১১, ২০২২
যেসব কারণে রোজা না রাখা বা ভাঙ্গার অনুমতি আছে।
অসুস্থতার মাসআলা: রােযার কারণে যে রােগ বৃদ্ধি পায় বা রােগ-ভােগ দীর্ঘ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে সে রােগে রােযা ভাঙ্গার অবকাশ আছে। উল্লেখ্য, আশঙ্কা যদি সুস্পষ্ট হয় তাহলে তাে কথা নেই। নতুবা একজন অভিজ্ঞ ও দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামতের প্রয়ােজন হবে।
হায়েয-নেফাস ওয়ালি মহিলার মাসআলা: রমযানের দিনে হায়েয-নেফাস অবস্থায় রােযা মাফ। তবে পরে তা কাযা করতে হবে। কিন্তু রমযানের দিনে হায়েয-নেফাস থেকে পবিত্র হলে অবশিষ্ট দিন রমযানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকা জরুরি। তবে উক্ত ওযরে ছুটে যাওয়া রােযাগুলাের সাথে এ দিনের রােযাও কাযা করবে। হযরত হাসান (রা) বলেন, "সুবহে সাদিকের পর যে হায়েয থেকে পবিত্র হয়েছে সে দিনে বাকি অংশে পানাহার করবে না"। (প্রাগুক্ত)
মাসআলা: পিরিয়ড চলা অবস্থায় মহিলাদের নামাজ মাফ, তা পরে কাযা আদায় করতে হবে না। কিন্তু রােযা যেহেতু বছরে একবার আসে তাই পবিত্র হওয়ার পর রােযা কাযা করতে হবে।
গর্ভবতীর মাসআলা: রােযা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলা নিজের বা তার সন্তানের প্রাণহানি বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা হলে তার জন্য রােযা না রাখা বা ভাঙ্গা জায়েয। তবে পরে কাযা করে নিবে।
দুগ্ধদানকারিনী মহিলার মাসআলা: রােযার কারণে সন্তান দুধ না পেয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে এমন আশঙ্কা হলে দুগ্ধদানকারীনীও আপাতত রােযা ভাঙ্গতে পারবে এবং পরে কাযা করে নিবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে إن الله وضع عن المسافر الصوم وشطر الصلاة وعن الحامل
. والمرض . رواه الترمذي وقال : هذا حديث حسن
আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রােযার হুকুম শিথিল করেছেন এবং নামায কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রােযার হুকুম শিথিল করেছেন। (জামে তিরমিযী ১/১৫২ ৫)।
এপ্রিল ০৪, ২০২২
রমজান মাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল।
রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো: রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না’’ [সুনান ইবন মাজাহ: ১৭৪৬, সহীহ]
দান-সদকা করা: এ মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান সদকা করা। হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত: ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমজান মাসে তার এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]
ইতিকাফ করা: ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর অর্থ স্থির থাকা বা অবস্থান করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় জাগতিক কার্যকলাপ ও পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সওয়াব-এর উদ্দেশ্যে মসজিদে বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা বা স্থিতিশীল থাকাকে ইতিকাফ বলে। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ইতিকাফ করতেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত: ‘‘প্রত্যেক রমজানে তিনি শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন এবং দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নাত। [সহীহ আল-বুখারী : ২০৪৪]
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া: রমাদান মাস ছাড়াও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমজান মাসে এর আরো বেশি ফজিলত রয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত’’ [সহীহ মুসলিম : ২৮১২]
কল্যাণকর কাজে মগ্ন থাকা: এ মাসটিতে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহ্বান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জানো?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪]
এপ্রিল ০৩, ২০২২
রোজা বা সাওম পালনের উপকারিতা।
রোজা বা সাওম ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। সুবহে সাদেক বা ভোরের সূর্যের আলো থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকে বিরত থাকার নাম রোযা।
ডা. আর ক্যাম ফোর্ডের মতে, “রোজা হচ্ছে পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।”
ডা. এম. কাইভ বলেন, “রোজা রাখলে শ্লেষ্মা ও কফজনিত রোগ দূরীভূত হয়।”
ডা. ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, “রোজা স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী; তবে ইফতারিতে বেশি খাওয়া ক্ষতিকর।”
১৯৫৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডা. গোলাম মুয়াযযম সাহেব কর্তৃক “মানব শরীরের উপর রোজার প্রভাব” সম্পর্কে যে গবেষণা চালানো হয়, তাতে প্রমাণিত হয় যে, রোজার দ্বারা মানব শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না, কেবল ওজন সামান্য কমে। তাও উল্লেখযোগ্য কিছু নহে, বরং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এরূপ রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ (Dietcontrol) অপেক্ষা বহুদিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ। ১৯৬০ সালে তাঁর গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করে রোজা দ্বারা পেটের শূলবেদনা বেড়ে যায়, তাদের এ ধারণা নিতান্তই অবৈজ্ঞানিক। কারণ উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলেই এটা বাড়ে। এ অতি সত্য কথাটা অনেক চিকিৎসকই চিন্তা না করে শূলবেদনার রোগীকে রোজা রাখতে নিষেধ করেন। তবে রোজা দ্বারা কোনো কোনো মানুৃষ কিছুটা খিটখিটে মেজাজী হয়। এর কারণ সামান্য রক্ত শর্করা কমে যায় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ক্ষতিকর নয়। অন্যকোন সময় ক্ষিদে পেলেও এরূপ হয়ে থাকে।